ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে সব ধরণের বিক্ষোভ ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় অং সান সু চি সরকারের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এর ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বুধবার এক বিবৃতিতে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে তারা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি মন্ত্রণালয় চলতি মাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তারের পর মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে দেখা দেওয়া উদ্বেগের মধ্যেই এ ঘোষণা এলো। কয়েক দশকের সামরিক শাসন শেষে ২০১৫ সালে এক ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সরকারে আসীন হয় সু চি-র নেতৃত্বাধীন দল। সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ থাকা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংবিধান অনুযায়ী শক্তি ভাগাভাগি করতে হয় তাদের।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির অবদানের প্রশংসা করলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের সমালোচনা করে আসছে। রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অত্যাচার নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থতার দায়ও সু চিকে দেওয়া হচ্ছে।
অগাস্টের শেষ থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া ও লুটপাটের নালিশ উঠেছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সামরিক বাহিনীর দমন অভিযান থেকে বাঁচতে সোয়া ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘ। আগামী সপ্তাহে ইয়াঙ্গুন সফরের সময় ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসও রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারেন বলে ধারণা সাধন হচ্ছে। এর মধ্যেই মিয়ানমার সরকার ‘জনসাধারণের বিরক্তি ও উদ্বেগ’ এড়াতে এবং ‘যান চলাচল নির্বিঘœ’ করতে ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রে সব ধরণের বিক্ষোভ ও সমাবেশের আবেদন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়।
“বার্মার প্রধান প্রধান এলাকায় সব ধরণের বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কোনো বৈধ উদ্দেশ্য থাকতে পারে না,” মিয়ানমারকে আগের নামে সম্বোধন করে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনায় এমনটাই বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস। সামরিক বাহিনীর এক কাজের ব্যাপারে প্রধান ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞার হুকুম দিয়েছেন, যাকে নাগরিকদের মৌলিক দাবি পূরণে দেওয়া বেসামরিক সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর সরাসরি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “সরকারের উচিত এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আইনের শাসনকে সর্ব-প্রথমে যোগ্যতা দেওয়া ও সেনাবাহিনীর অযাচিত কর্মকা-গুলোর বিরোধিতা করা,” বলেন তিনি। রয়টার্স জানায়, ইয়াঙ্গুন এলাকার নিরাপত্তা ও সীমানা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী কর্নেল অং সোয়ে মোয়ে স্বাক্ষরিত ওই নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় এ শহরের ১১টি এলাকায় সমাবেশের সব ধরণের আবেদন না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কতদিনের জন্য এই নির্দেশ নিষেধাজ্ঞায় তা বলা হয়নি। সামরিক বাহিনী পরিচালিত ইয়াঙ্গুনের আহলোন এলাকার প্রশাসনিক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কাজের ব্যাপারে প্রধান ব্যক্তি তার দপ্তরে সরকারের এই নির্দেশ পৌঁছেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে ইয়াঙ্গুন পুলিশের উপ-প্রধানের মন্তব্য পাওয়া যায় নি। ইয়াঙ্গুনের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারে সাংবাদিক এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর দমন নিপীড়ন বাড়ছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। গত বছরের শুরুতে সু চি সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিতর্কিত এক টেলিযোগাযোগ আইনে সাংবাদিকসহ অন্তত ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার সাধন হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ গ্রেপ্তারকে সমালোচনা দমনের দক্ষতা হিসেবে দেখছে। গত সপ্তাহেও দেশটির আদালত ড্রোন ব্যবহার করে ছবি নেওয়ার অপরাধে আকাশযান আইনে দুই সাংবাদিক, তাদের দোভাষী ও গাড়িচালককে দুই মাসের বন্দিত্ব দিয়েছে। রোববার মিয়ানমারের পুলিশ উগ্র-জাতীয়তাবাদী এক বৌদ্ধ সন্নাসীকে গ্রেপ্তারের উক্তি জানিয়েছে, যার নামে সামনে থেকেই রোহিঙ্গাবিরোধী মতবাদ ছড়ানোর নালিশ ছিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে।